NEWS

6/recent/ticker-posts

উল্টো পথে প্রবাহিত হচ্ছে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পানি। যাচ্ছে শাখা নদী শীতলক্ষ্যাতে।

 

উল্টো পথে প্রবাহিত হচ্ছে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পানি। যাচ্ছে শাখা নদী শীতলক্ষ্যাতে।

সঠিক সিদ্ধান্ত ও ভুল প্রকল্পের কারনে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র মৃতপ্রায়।
পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ


আপনারা ঠিকই শুনেছেন শীতকাল এলেই কাপাসিয়া টোক হতে ভৈরব বাজার পর্যন্ত পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের পানি ভাটির দিকে প্রবাহিত না হয়ে উজানের দিকে প্রবাহিত হয়। ব্রহ্মপুত্র নদ বিশ্বের ২২ তম দীর্ঘতম নদ যার দৈর্ঘ্য ২৮৫০ কিলোমিটার। বাংলাদেশের ৬০ ভাগ পানি এই নদী দিয়ে দেশে প্রবেশ করে।

পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ

দেওয়ানগঞ্জ---জামালপুর----ময়মনসিংহ----কিশোরগঞ্জ জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র নদের আদি গতিপথ। ১৭৮৭ সালের আগ পর্যন্ত এটি ছিল ব্রহ্মপুত্রের প্রধান জলধারা। তৎকালীন সময়ে এই পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ প্রায় ১০-১২ মাইল প্রশস্থ ছিল। কিন্তু ১৭৮৭ সালে ভূমিকম্প এবং বন্যায় এই নদী গতিপথ পরিবর্তন করে তৎকালীন ছোট ঝিনাই নদীতে প্রবাহিত হয়ে বর্তমানে যমুনা নামে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে মূল গতিপথের ভূমি উত্তোলিত হওয়ায় পলি জমে আস্তে আস্তে খালে রূপ নিয়েছে।

পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের বিভক্তস্থান

পুরাতন ব্রহ্মপুত্র কাপাসিয়া টোকে আবার দুটি শাখায় বিভক্ত হয়েছে যার একটি পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নামে ভৈরব বাজারে মেঘনায় পতিত হয়েছে যেটি নদের মূল ধারা অপর শাখাটি শীতলক্ষ্যা নামে নায়ারণগঞ্জ হয়ে মেঘনায় পতিত হয়েছে।

অত:পর এই পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের টোক হতে ভৈরব বাজার গতিপথের কটিয়াদী শহরের জালালপুর নামক স্থানে নদের বুকে বাঁধ নির্মাণ করা হয়। ফলে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে নদের বুকে পলি জমে নদটি একটি ড্রেনের ন্যায় হয়ে যায়।

 বর্তমানে টোকে নদীর ত্রিমোহনার অবস্থা

) ময়মনসিংহ হতে আগত ব্রহ্মপুত্রের পতিত মুখের প্রশস্থতা ৩৫০ ফুট
) নারায়গঞ্জগামী শাখা নদী শীতলক্ষ্যার উৎসমুখের প্রশস্থতা ৩০০ ফুট
) ভৈরবগামী পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের উৎসমুখের প্রশস্থতা মাত্র ৪০/৫০ ফুট।

ফলে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের সম্পূর্ণ পানি শাখা নদী শীতলক্ষ্যায় প্রবাহিত হয়। কিন্তু পরিতাপের বিষয় ভৈরবগামী পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদটি মাত্র ৯০ ফুট প্রশস্থতায় খনন হচ্ছে। ফলে খননের পরেও শীতলক্ষ্যার প্রশস্থতা বেশী থাকায় পানি শীতলক্ষ্যায় প্রবাহিত হবে।

পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ

পুরাতন ব্রহ্মপুত্র খনন প্রকল্প- ০১ :
(
দেওয়ানগঞ্জ হতে ময়মনসিংহের টোক)
* খনন দৈর্ঘ্য- ২২৭ কিলোমিটার
* খনন এলাকা-- জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ হতে ময়মনসিংহের গফরগাঁও এর টোক পর্যন্ত।
* খনন প্রশস্থতা--- ৩৩০ ফুট
* খনন গভীরতা --- ১০ ফুট (শীতকালে)

পুরাতন ব্রহ্মপুত্র খনন প্রকল্প- ০২ :
(
ময়মনসিংহের টোক হতে ভৈরব বাজার)
* প্রকল্পের নাম-- ভৈরব-কটিয়াদী নৌপথ পুনুরুদ্ধার প্রকল্প।
* খনন দৈর্ঘ্য--- ৮৫ কিলোমিটার
* খনন এলাকা--- কাপাসিয়া টোক হতে ভৈরব
* খনন প্রশস্থতা--- ৯০ ফুট
* খনন গভীরতা --- ১০ ফুট

কাপাসিয়া টোক হতে ভৈরব পর্যন্ত পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের অবস্থা খুবই করুন। এখানে নদটি শুকিয়ে একদম পানি শূন্য। প্রশস্থতা নাই বললেই চলে।বর্তমানে এখানে ৯০ ফুট প্রশস্থতায় এবং ১০ ফুট গভীরতায় খনন হচ্ছে। অপরদিকে দেওয়ানগঞ্জ হতে টোক পর্যন্ত নদটি ৩৩০ ফুট প্রশস্থতায় এবং ১০ ফুট গভীরতায় খনন হচ্ছে।

টোকে এসে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ দুটি শাখায় বিভক্ত ভৈরবগামী পুরাতন ব্রহ্মপুত্র এবং নারায়ণগঞ্জগামী শীতলক্ষ্যায়। পূর্বে ভৈরবগামী অংশটি ছিল পানির মূল প্রবাহ কিন্তু কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীর জালালপুর ইউনিয়নে বাঁধ নির্মানের ফলে ভৈরবগামী পুরাতন ব্রহ্মপুত্র পলি জমে ভরাট হয়ে যায়। বর্তমানে টোকে ভৈরবগামী ব্রহ্মপুত্রের উৎসমুখ মাত্র ৪০ ফুট প্রশস্থ আর নারায়ণগঞ্জগামী শীতলক্ষ্যার প্রশস্থতা ৩০০ ফুট। ফলে ময়মনসিংহ হতে আগত পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের পানি ভৈরবগামী পুরাতন ব্রহ্মপুত্রে প্রাবহিত না হয়ে নারায়ণগঞ্জগামী শীতলক্ষ্যায় প্রবাহিত হতে শুরু করে। বর্তমান সময়ে শুধুমাত্র ভরা মৌসুমে ভৈরবগামী পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদে কিছু পরিমাণ পানি প্রবাহিত হয়। আর শীতকাল পানি ভৈরবের দিকে না যেয়ে ভৈরবগামী ব্রহ্মপুত্রের পানি নারায়ণগঞ্জগামী শীতলক্ষ্যায় প্রবাহিত হয়।
পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ



কাপাসিয়া টোক হতে ভৈরব গামী পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের নাব্যতা ফেরাতে করণীয়

/ নদের বিভক্তস্থান কাপাসিয়া টোকে ভৈরবগামী পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের উৎসমুখটি কমপক্ষে ৩৩০ ফুট প্রশস্থতায় খনন করতে হবে। কারণ উক্তস্থানে শীতলক্ষ্যার উৎসমুখ ৩০০ ফুট প্রশস্থ।

/ টোক হতে ভৈরব পর্যন্ত পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ কমপক্ষে ৩৩০ ফুট প্রশস্থতা এবং ২০ ফুট গভীরতায় খনন করতে হবে। কারণ তা না হলে শীতলক্ষ্যার প্রশস্থতা এবং গভীরতা বেশী থাকায় পানি বর্তমানের ন্যায় খননের পরও শীতলক্ষ্যায় প্রবাহিত হবে।

/ নদের উপর স্বপ্ল দৈর্ঘ্যের ব্রীজ/কালভার্ট গো ভেঙ্গে বড় আকারের সেতু বানাতে হবে। কারণ- এইসকল ছোট ব্রীজ/কালভার্টের জন্য নদীর প্রশস্থতা কমে গিয়ে ড্রেনে রূপ নিয়েছে।

আশাকরি উপর্যুক্ত কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমলে নিবেন এবং এককালের বিশাল ব্রহ্মপুত্রকে ৯০ ফুটের খাল না বানিয়ে কমপক্ষে ৩৫০ ফুটের একটি মাঝারী নদীর রূপ দিবেন।

লেখকঃ আশিকুজ্জামান রাজন

সম্পাদকঃ খালেদ সাইফুল্লাহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ